Village Development Committee (VDC), Natural Leader (স্বনেতা/স্বভাবনেতা) গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো
প্রশ্ন Objectives of Village Development Committee (VDC) and Para Support Committee (PSC) পাড়া সাপোর্ট কমিটি ও গ্রাম উন্নয়ন কমিটির উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী কি কি?
উত্তর ঃ
১. কর্মসুচী বাস্তবায়নে সহায়তা করা
২. স্থানীয় সম্পদ চিহ্নত করে সম্পদের সুষ্ঠ বণ্টন
ও ব্যবহার নিশ্চিত করা
৩. পাড়া ও গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করা
৪. বিপদে-আপদে (দুর্যোগ, মহামারি, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি) সদস্যদের সহযোগীতা করা
৫. তালাক, যৌতুক, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগনকে সচেতন করা ও প্রতিরোধ করা
৬. GO,
NGO, ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সেবা ও সহযোগীতা বৃদ্ধির জন্য যোগাযোগ করা
৭. সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহযোগীতা
করা
৮. দলীয় সমস্যা (দ্বন্দ/কোন্দল) নিরসন করা
প্রশ্ন ঃ Natural Leader (স্বনেতা/স্বভাবনেতা) বলতে কি বোঝেন ?
উত্তর ঃ প্রতিটি Community তে কিছু সংখ্যক লোক নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তাঁরা নিজেদের অর্থ-বিত্ত-বৈভব, ক্ষমতা, জ্ঞান, দক্ষতা, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, পারিবারিক ঐতিহ্য, সততা, সুনাম ইত্যাদির দ্বারা নিজস্ব স¤প্রদায়/কমিউনিটিতে এমন একটি অবস্থান অর্জন করে থাকেন যার
দ্বারা কমিউনিটির সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ সকল
বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা বাঞ্ছনিয় হয়ে পড়ে, এরাই স্বনেতা বা Natural Leader কমিউনিটিতে কোন
বিশৃঙ্খলা বা ঝগড়া-বিবাদ দেখা দিলে তারা স্বউদ্যোগে সেসব সমাধান করে থাকেন এবং কমিউনিটির
লোকেরাও তা মেনে নেয়। কোন বিষয়ে পরামর্শের প্রয়োজন হলেও লোকজন এসব Natural Leader বা স্বনেতাদের
কাছে পরামর্শের জন্য যান। কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করেও তারা এক একজন নেতা এবং নিজস্ব
কমিউনিটিতে তাদের প্রভাব খুব বেশী।
প্রশ্ন ঃ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নেতার ভূমিকা আলোচনা করুন।
উত্তর ঃ কোন কমিউনিটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেই এলাকার নেতাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন স্বভাবতই মানুষ নতুন কোন প্রযুক্তি বা ধারনা গ্রহণে প্রথমে অনিহা দেখায়। সাধারনত এজিও বা প্রকল্পগুলো অনগ্রসর এলাকাগুলোতে কাজ করে। যেখানের বেশিরভাগ লোক শিক্ষা ও সচেতনতার দিক থেকে পিছিয়ে আছে। তাই তারা নিজেদের ভাল-মন্দ সঠিক ভাবে বিচার করতে ও বুঝতে পারে না। প্রকল্পগুলো যদিও তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে, তবুও তারা প্রথমে তা সন্দেহের চোখে দেখে। এক্ষেত্রে যদি প্রথমে ঐ এলাকার স্ব-নেতাদের প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করে তাদের মাধ্যমে সাধারন জনগণের কাছে কোন সেবা তুলে ধরা হয় তাহলে খুবই ভাল ফল পাওয়া যায়। কারন কমিউনিটির সাধারন জনগণ তাদের স্ব-নেতাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ও তাদের কথা মেনে চলে। তাই স্ব-নেতাদের যদি উদ্বুদ্ধ করে প্রকল্পের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা যায় তাহলে কাজ করা অনেক সহজ হয়ে যায় এবং কাজের ফলাফল ভাল হয়।
প্রশ্ন ঃ গ্রামীণ ক্ষমতা
কাঠামো আলোচনা করুন।
উত্তর ঃ “The possibility of imposing one’s will upon the behavior of other persons.” অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা অপরের উপর চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি হলো
ক্ষমাতা। আমরা এভাবেও বলতে পারি, যা কিনা আনুগত্যের
সম্পর্ক ( Relation of subordination) সৃষ্টি করে
তাই ক্ষমতা। সকল সমাজেই নেতৃত্ব সৃষ্টির মধ্যে দিয়েও ক্ষমতা অসমভাবে বন্টিত হয়ে যায়।
সাধারণভাবে নেতার ক্ষমতা অনুসারীদের চেয়ে, সব সময়ই বেশি। তাই ক্ষমাতা কাঠামো বুঝতে হলে একই সাথে এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটিও
বুঝতে হবে যা কিনা এই ক্ষমতা কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখন এই ক্ষমতা সমাজে স্বীর্কত
হতেও পারে আবার নাও পারে। স্বীকৃত ক্ষমতাকে আমরা কতৃর্ত্ব বলতে পারি। গ্রামীণ ক্ষমতা
কাঠামো বিশ্লেষণ করলে আমরা তিন ধরনের ক্ষমতা কাঠামো দেখে থাকি।
১. Legal ঃ এ ধরনের ক্ষমতা কাঠামোর আনুগত্য আইনের প্রতি, কোন ব্যক্তির প্রতি নয়। যিনি ক্ষমতা প্রয়োগ করেন তিনি সুনির্দিষ্ট
প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে থাকেন। আইন অধিকারকে পরিষ্কারভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়।
২. গতানুগতিক বা Traditional ঃ গ্রামীণ সমাজে এটি ভিন্ন
বৈশিষ্ট্য মন্ডিত ক্ষমাতা। বংশানুক্রমিক ক্ষমতা গতানুগতিক কতৃত্বের ভিত্তি। ক্ষমতাবানের
মর্যাদা এখানে প্রভুর মতো। প্রকৃত অর্থেই এখানে আনুগত্যের সম্পর্ক তৈরী হয়। তবে তা
হয় ব্যক্তির প্রতি। এখানে আইনের গুরুত্ব গৌন, প্রথাই মুখ্য এবং এই প্রথার ব্যাখ্যা প্রভূর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
৩. অত্যন্দ্রীয় বা Charismatic ঃ গ্রামীণ সমাজে
অসীম সাহসিকতা, যাদুকরী ক্ষমতা
ইত্যাদি এক ধরনের ক্ষমতা সৃষ্টি করে। পীর-ফকির ইত্যাদির ক্ষমতা এই ধরনের কর্তৃত্বের
নমুনা। সাধারন মানুষের অজ্ঞতা ও অশিক্ষার ফলে অনেকে এই ধরনের ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে।
প্রশ্ন ঃ গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানগুলো কি কি ?
উত্তর ঃ গ্রামীণ ক্ষমতা
কাঠামোর কতগুলো উল্লেখযোগ্য উপাদান রয়েছে। এগুলি সর্বত্রই একইভাবে একই মাত্রায় বিরাজমান
নাও হতে পারে। তবে সামগ্রীকভাবে এই উপাদানসমূহ গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোন অত্যাবশ্যকীয়
বৈশিষ্ট।
১. অন্তর্ভূক্তকরণ (Encapsulation) ঃ গ্রামীণ ক্ষমতা
কাঠামো বৃহৎ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্ভূক্ত। সামগ্রীক প্রাতিষ্ঠানিক আইন তৈরী হচ্ছে
রাষ্ট্র কর্তৃক। আবার গ্রামীণ মূল্যবোধ, আচার-আচরণ, প্রাতিষ্ঠানিক
নিয়ম এর বার্যকারিতাকে প্রভাবিত করছে।
২. দলাদলি (Factionalism) ঃ গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর
বিভিন্ন কর্ম তৎপরতার প্রোক্ষিতে দলাদলির গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রাম জীবনে দ্বন্দ্ব ও
বিভক্তির বিভিন্ন রূপ বিদ্যমান। এই দলাদলি শুধু আদর্শ নিয়ে নয়, সম্পদ, মর্যাদা, ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে তার প্রেক্ষিত তৈরি হয়।
৩. দাতা-গ্রহিতা সম্পর্ক (Patron-Client Relation) ঃ গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য
দাতা-গ্রহিতা বা মক্কেল-মুরুব্বী বিশ্লেষণ প্রয়োজন। দাতা-গ্রহিতা সম্পর্ক সেই জাতীয়
সমাজগুলোতেই বিকাশ লাভ করে যেখানে সামাজিক বৈষম্য বেশ ব্যাপক, অর্থনৈতিক, সম্পদ, রাজনৈতিক ক্ষমতা, শিক্ষা ইত্যাদি অসমভাবে বন্টিত। যা আমাদের গ্রামীণ সমাজের ক্ষেত্রে খুবই পরিচিত।
৪. শ্রেণী সংহতি (Class alignment ) ঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রামের
নিম্নবিত্ত সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তাদের সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে
রাজনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয় না। বরং নিজেদের মধ্যে দুরত্ব তৈরি করে এবং এমন
লোকজনদের নেতৃত্ব মেনে নেয় যাদের সাথে তাদের বস্তুগত স্বার্থের কোন মিলই নেই।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে
আইনগত কর্তৃত্ব ও গতানুগতিক কর্তৃত্ব পরস্পর যুক্ত হয়েই বিরাজ করছে। যেমন একজন প্রভাবশালী
মোড়ল যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন এক অর্থে তার গতানুগতিক কর্তৃত্বই
শক্তিশালী হয়। আবার ঐ নির্বাচনে গতানুগতিক উপাদান যেমন বংশ, ঐতিহ্য ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে পারে তার নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে।
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর সাথে এমন অনেক বহুমাত্রিক ও জটিল বিষয় পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত
হয়ে রয়েছে।
Comments
Post a Comment